• ১৯ আশ্বিন১৪৩০  - বুধবার, অক্টোবর ৪, ২০২৩

ডিসেম্বরে স্পেন যাওয়ার কথা ছিল ফারদিনের

ডিসেম্বরে স্পেন যাওয়ার কথা ছিল ফারদিনের

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হারিয়ে শোকে পাথর বাবা সাংবাদিক কাজী নূর উদ্দিন রানা। তিনি দাবি করেন, ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন আমার-আজ হত্যাকাণ্ডের শিকার।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের ময়নাতদন্ত বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, ফারদিনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই সময় হাসপাতাল এলাকায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় নূর উদ্দিন রানাকে। সেখানে থাকা স্বজন ও ফারদিনের সহপাঠীরাও ছিলেন শোকে বিহ্বল। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

নূর উদ্দিন রানা বলেন, ডিবেটিংয়ে ফারদিন খুব ভালো ছিল। আগামী মাসেই (ডিসেম্বরে) স্পেনে ওয়ার্ল্ড ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল তার। তার পাসপোর্ট রেডি। তিনি বলেন, শত্রুতার কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ওর লাশের সঙ্গে মানিব্যাগ, অকেজো মোবাইল, ঘড়ি সবই পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ফারদিন। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নূর উদ্দিন রানা ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, শনিবার বুয়েটে ফারদিনের পরীক্ষা ছিল। শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সে ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। রাতে বাসায় অথবা বুয়েটের হলে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু রাত সোয়া ১১টার পর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে ফারদিনের মোবাইলের শেষ অবস্থানের সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় রামপুরা এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা মেলে ফারদিনের। তাকে শেষবার দেখা যায়, রামপুরা (ব্রিজের পাশে, ট্রাফিক পুলিশ বক্সের একটু আগে), শুক্রবার রাত ১০টা ৪৫ থেকে ১১টার মধ্যে। তখন তার সঙ্গে তার এক বান্ধবী ছিলেন। এরপর রামপুরা থানায় এ ব্যাপারে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন নূর উদ্দিন রানা।

তিনি বলেন, আমার ছেলে একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। বুয়েটে ভর্তি হলেও আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কারণে সে হলে থাকতে চাইত না। বাসায় থেকেই ক্লাস করত। ফারদিন ডিবেটিং ক্লাবসহ নানা ধরনের সোশ্যাল ওয়ার্কের (সমাজসেবা) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তবে সে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না। ফারদিন টিউশনি করত, বাসায় সে তার ভাইদের পড়ালেখায় সহযোগিতা করত। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পাব না। কিন্তু বিচার হোক, এটি চাই। মেধাবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, এটা বন্ধ হোক।

জানাজা শেষে দাফন : নিহত ফারদিনের প্রথম জানাজা হয়েছে তার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটে। সেখানে সহপাঠী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানাজায় অংশ নেন। দ্বিতীয় জানাজা হয় ডেমরার কোনাপাড়ায়। নূর উদ্দিন রানা জানান, ফারদিন এই এলাকাতেই বড় হয়েছে, স্কুলে পড়েছে। তাই এখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাদ মাগরিব পৈতৃক বাড়ি ফতুল্লার দেলপাড়ার নয়ামাটিতে তৃতীয় জানাজার পর তাকে দাফন করা হয়েছে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ফারদিন। সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের পেছনে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।


ভ্রমন
বিনোদন