• ২০ জ্যৈষ্ঠ১৪৩০  - শনিবার, জুন ৩, ২০২৩

পাইপলাইনে ৪ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা

পাইপলাইনে ৪ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা

উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত ৪৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার পাইপলাইনে পড়ে আছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া ঋণ গ্রহণে এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। তবে বৈদেশিক ঋণের চুক্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের ত্রুটি এবং শর্ত না বুঝে চুক্তি করায় পরবর্তীকালে তা গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রকল্প তৈরি, অনুমোদন ও তদারকির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ন ও দুর্নীতি হয় বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে আসে। রোববার ‘সুশাসন নিশ্চিতকরণে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এ সেমিনারের সঞ্চালনা করেন ইআরডি সচিব শরিফা খান।

সেমিনারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের গাড়ি কেন পরিকল্পনা কমিশনকে দিতে হবে? এখন থেকে প্রকল্পের গাড়ি মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার কাছে যাবে না। হারাম খেলে উন্নয়ন তো দূরের কথা কখনও কিছুই হবে না। এ সময় ইআরডি, পরিকল্পনা কমিশন এবং আইএমইডির কর্মকর্তাদের এক হাত নেন তিনি। বলেন, মানুষ হারাম খেলে, চুরি করলে দেশের উন্নতি হবে না। মানুষের চরিত্র ঠিক করতে হবে সবার আগে। চুক্তির শর্ত না বুঝে ইআরডির কর্মকর্তারা চুক্তি সই করেন। এতে পরে ‘গলার ফাঁস’ হয়ে যায়। কিছু করার থাকে না। মামলা করলে দেখা যাবে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের জেলে ঢুকতে হবে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা ঠিকমতো ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) না পড়েই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন। এতে পরে ব্যয় ও সময় বাড়াতে হয়। প্রকল্পে বেশি ব্যয় ধরা হয়। এটা এক ধরনের ডাকাতি। এগুলো বন্ধ করতে হবে। এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বক্তব্য দেন-পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ। বৈদেশিক ঋণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

সেমিনারে জানানো হয়, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ বাড়ছে বাংলাদেশের। তবে তা এখনও গ্রহণ সীমার মধ্যেই আছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪০ শতাংশ পর্যন্ত আমরা ঋণ নিতে পারি। আমরা এখন ঋণ নিচ্ছি জিডিপির ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এছাড়া রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের হিসাবে ঋণ নিতে পারি ১৮০ শতাংশ। সেখানে ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোট রাজস্ব আয়ের ১৫ শতাংশ ঋণ নেওয়া গেলেও আমরা নিচ্ছি ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, আমাদের সক্ষমতার অনেক কম বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছি। তবে গত কয়েক বছরে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। এই ঋণ পরিশোধেরও চাপ বাড়বে আগামীতে। আরও জানানো হয়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত আমাদের দেশে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১৬৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে অর্থছাড় হয়েছে ১১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। এখনও পাইপলাইনে পড়ে আছে ৪৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। এখনো স্বল্প সুদের ঋণ বেশি পাচ্ছে বাংলাদেশ। মোট ঋণের ৭৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ হলো ফিক্সড রেটের বা স্বল্প সুদের ঋণ। এছাড়া ফ্লটিং রেট বা কিছুটা অনমনীয় ঋণ ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। এগুলোর গড় সুদের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। গড়ে ২৮ বছরে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হবে। গড় রেয়াতকাল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে মোট বৈদেশিক ঋণের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ঋণ মাত্র ৪০ শতাংশ আর বহুপাক্ষিক ঋণ ৬০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) থেকে ৩২ শতাংশ, এডিবি থেকে ২৪ শতাংশ, জাপান থেকে ১৮ শতাংশ, চীনের ৮ শতাংশ, রাশিয়ার ৫ শতাংশ, ভারতে ২ শতাংশ, আইডিবি ও এআইআইবির ১ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ৫ শতাংশ ঋণ।

সেমিনারে আরও জানানো হয়, মোট গ্রহণ করা ঋণের মধ্যে এসডিআরে নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ ঋণ। এরপরই রয়েছে মার্কিন ডলারে ৩২ শতাংশ, জাপানি ইয়েনে ১৮ শতাংশ, ইউরোয় ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য মুদ্রায় ৬ শতাংশ ঋণ নেওয়া হচ্ছে।


ভ্রমন
বিনোদন